পেকুয়া
জহির ইসলাম
কে কে যাবি আমার সাথে
কে কে যাবি আয়
আঁকা বাঁকা মেঠো পথে
আম কাঁঠালের গাঁয়।
তিন দিকে তার সাগর ঘেরা
একদিকে তার বন
গাছ-গাছালি পাখা-পাখালি
দেখ্বি সারাক্ষণ।
হাজির-গাজির কিষাণ-মাঝির
পল্লী বধুর ধন
ধানে-নুনে, পানে-চুনে
যায় জুড়ে যায় মন।
কে কে যাবি খুরুশ্কুলে
কে কে যাবি আয়
কক্সবাজারের উত্তর পাশে
আমার সোনার গাঁয়।
কবিগানঃ
গানে একজন অপরজনকে কাব্যকথায় পরাজিত না করা পর্যন্ত চলতে থাকে কবিগানে লড়াই। একজন অপরজনকে এইভাবে ঘায়েল করে। যেমনঃ-
প্রথমজন:
‘‘ধান দিলে তো চইল হবেনা, ন দিলে পলত
ন’লাইথ্যাইলে ওজুঁর নইব গুতাইলর বলত।’’
দ্বিতীয় জন:
‘‘ফুড়া পানির ফু’ড়ি মাছ দৈয্যাত যদি পরে
ছ-ল যদি প-ল নয় বাঘর ট্যাং কেন্ ধরে? ইত্যাদি
গাজীর গীতঃ
লোক সংস্কৃতির অন্যতম উপাদেয় গাজীর গীত। কিংবদন্তির সম্রাট আলেকজান্ডার দি গ্রেট বা বাদশাহ সেকান্দর পুত্র শাহ্ গাজীকে স্মরণ করেই এ গীত গাওয়া হয়। একজন গায়ক (যিনি গাইন নামে খ্যাত) সুরেলা কন্ঠে গান ধরে।
গাইনের গানকে গাইনের পালাও বলা হয়, যেমন-
(আঁই পর দেশী আল্লাহ আঁই পরদেশী
ঘর বাড়ী ছারি আঁইলাম তোর প্রেমত পরি)
ভাই থাকি কি গরিব নথাইলে ব’
সাইর পালি কি গরিব ন কাড়িলে র’।
পইর থাই কি গরিব নথাইলে পানি
ঘর বাধি কি গরিব নথাইলে ছানী....
এভাবে গান গেয়ে যায় অবলীলায়। কয়েকজন সঙ্গী তাঁর দোহারী হিসেবে গানের শিরো শেষে টান ধরে-
ধুয়াঃ বাইন দুয়াত্তু নু আইস্য তুঁই নিশির কালে
মা বাপরে লাগাই দিব মাইনষ্যে দেখিলে
অথবা-
গুরু .........উপায় বল না............,
জনম দুঃখী কপাল পোড়া
গুরু আমি একজনা।
হাইল্যাগীত বা ভাইট্টইল্যাগীতঃ
লোক সংস্কৃতির অনবদ্য আর একটি উপকরণ হাইল্যাগীত, তা ভাইট্টইল্যাগীত নামেও পরিচিত। গ্রাম বাংলার কৃষাণদের মধ্যে হাইল্যাগীতের চমৎকার প্রতিফলন দেখা যায়। আমনও বোরোধান রোপণের সময় একদল কৃষক দলীয়ভাবে এ গান গেয়ে থাকে। দারুণ চিত্তাকর্ষক এই গীতে সুরধ্বনি দক্ষিণা বাতাসে মিশে অপরূপ এক সুরের মূর্চ্ছনা সৃষ্টি করে। যেমনঃ
হাইল্যা রইয়ে ছ’ন ঘরত
গিরছ রইয়ে ব’র ঘরত
নিত্তি পিত্তি ঝর পরেদ্দে
হাইল্যার ঘর গানত্।
দুঃখে সুখে রাইত পুয়াই
ফজর হইলে হাল লই যাই,
পুগর বেইল পছিমে গেল্গই
ভাতর দেহা নাই।
অথবা কলসী কাঁখে কুলবধুকে লক্ষ্য করে গাওয়া-
কা’লা ঘরার মাথা লই
ফুঁঢ়ে চুড়ে ঘলের গই
শাশুড়ী মা পু’চার গরের
কা’লা ঘরা কই?
কক্সবাজারের প্রতিটি অঞ্চলের নবীন/প্রবীনদের মুখে মালকাবানুর হঁওলার কলি গুলো আজও গুন্ গুন্ করতে শোনা যায়। মালকাবানুকে বিয়ে করবার জন্যে যাত্রাকালে মনুমিয়াকে লক্ষ্য করে তাঁর মায়ের গাওয়া সেই হঁওলার অংশ বিশেষ নিম্নে পত্রস্থ করা হলোঃ
মনুমিয়ার দেশেরে...বিয়ার বাদ্য আইজ্যা বাজেরে
সাজেরে মনুমিয়া (২ বার)... বিয়ার সাজন সাজেরে
মালকা বানুর দেশেরে ...বিয়ের বাদ্য আইজ্যা বাজেরে
মালকার বিয়ে হইবো (২বার)...মনু মিঞার সাথেরে।
মালকাবানুর সাতঅ ভাই... অবাইজ্যা মনুমিয়ার কেহ নাই
কি মতে যাবি মনু (২বার)... মালকাবানুর দেশেরে
হায় হায় রে.......
অপুত্রে... মালকাবানুর দেশে যাইতেরে... বড় বড় দইজ্যা আছেরে
কি মতে যাবি পুত্রে (২বার)... হঁওসের মালকাবানুর দেশেরে
হায় হায় রে..........
অমারে... নৌকা সাম্পান লইয়ারে... সেই না দইজ্যা পারাইমরে
তবে সে যাইয়ুম মারে (২বার)...হঁওসের মালকাবানুর দেশেরে
অপুত্রে... মালকাবানুর দেশে যাইতেরে... বড় বড় পাহাড় আছেরে
কি মতে যাবি পুত্রে(২বার)... হঁওসের মালকাবানুর দেশেরে
হায় হায় রে........
অমারে... হাজারঅ মেইট্টাল আইন্নুম গো... সেই না পাহাড় কাইট্টুম গো
তবে সে যাইয়ুম মারে(২বার)... হঁওসের মালকাবানুর দেশেরে
অপুত্রে... মালকাবানুর দেশে যাইতেরে... বন’র বাইঘ্যা আছেরে
কি মতে যাবি পুত্রে(২বার)... হঁওসের মালকাবানুর দেশেরে
হায় হায় রে.........
অমারে...দুই নালী বন্দুক আইন্নুম গো... সেই না বন’র বাইঘ্যা মাইজুম গো
তবে সে যাইয়ুম মারে (২বার)... হঁওসের মালকাবানুর দেশেরে
.........................................
বধুর উত্তরঃ-
চিয়ন রাস্তা বিরবিজ্যা, আছার খাইয়ি আতিক্যা,
সেই আছার কা’লা ঘরা ভাঙি গিইয়ে গই।
খুরুশ্কুলে যে সব লোককবি তাদের সময়ে স্বপ্নের বাঁশি বাঁজিয়ে ছিলেন এঁদের মধ্যে অনেকে কালের গর্ভে হারিয়ে গেছেন, অনেকে যাপন করেছেন মানবেতর জীবন। তাঁর মধ্যে যাঁদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন- ছুরুত আলম, কালা মিঞা (কালু মেম্বার) আমিন, মীর আহমদ, আব্দু ছমদ, ইসহাক মিয়াঁজী, আমির হামজা, উমর হামজা, গোলালুর রহমান প্রমুখ।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস